
বিশ্বে বায়ুদূষণে মৃত্যুতে পঞ্চম বাংলাদেশ
বিশ্বজুড়ে বায়ুদূষণের কারণে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ পঞ্চম স্থানে রয়েছে। শুধু শহরাঞ্চলেই নয়, সারা দেশের শতভাগ মানুষ বাস করছে দূষিত বায়ুর মধ্যে। বিশ্বে বাংলাদেশ ছাড়া আর মাত্র চারটি দেশের শতভাগ মানুষ দূষিত বায়ুর মধ্যে বসবাস করছে। বায়ুদূষণজনিত কারণে ২০১৭ সালে বাংলাদেশে অন্তত এক লাখ ২৩ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী বায়ুদূষণ নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থার ‘দ্য স্টেট অব গ্লোবাল এয়ার–২০১৯’ (এসওজিএ) শীর্ষক প্রতিবেদন এ তথ্য জানিয়েছে। বুধবার প্রকাশিত এ প্রতিবেদন যৌথভাবে তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব কলম্বিয়া, টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়, ইনস্টিটিউট অব হেলথ ম্যাট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন ও হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউট। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, যে পাঁচটি দেশের শতভাগ মানুষ দূষিত বায়ুর মধ্যে বাস করছে তার মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়াও আছে চীন, ভারত, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়া।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বজুড়ে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে বর্তমান সময়ে জন্ম নেওয়া শিশুদের গড় আয়ু ২০ মাস কমবে। বাংলাদেশের বায়ুর মান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানমাত্রার চেয়ে অনেক নিচে। সংস্থাটির বেঁধে দেওয়া সীমার মধ্যে বায়ুর মান ধরে রাখতে পারলে যে দেশগুলো লাভবান হবে, তার মধ্যে সবার ওপরে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে মানুষের গড় আয়ু তখন বাড়বে ১ দশমিক ৩ বছর। আর ভারত, পাকিস্তান ও নাইজেরিয়ায় গড় আয়ু এক বছর করে বাড়বে।
সংস্থাটি বলছে, ২০১৭ সালের হিসাবে প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজন বায়ুদূষণজনিত কারণে মারা গেছে। সড়ক দুর্ঘটনা বা ধূমপানের কারণে মৃত্যুর হারের চেয়ে এই হার বেশি।
মূলত বায়ুতে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ক্ষুদ্র বস্তুকণা পিএম–২.৫ ও পিএম–১০–এর পরিমাণ মেপে বায়ুর মান নির্ধারণ করা হয়েছে। বাতাসে পিএম–২.৫–এর পরিমাণের দিক থেকে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে থাকা দেশগুলো দক্ষিণ এশিয়ার। এই দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে নেপাল, ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মাত্রা অনুযায়ী, ২০১৭ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি দূষিত বায়ু ছিল নেপালে। এ অঞ্চলে সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর বায়ু ভুটানের।
প্রতিবেদনটি বলছে, বিশ্বে বায়ুদূষণের কারণে হৃদরোগ, শ্বাসকষ্টজনিত জটিল সমস্যা, ফুসফুসে সংক্রমণ ও ক্যান্সারের মতো রোগবালাই ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষত শিশু ও গর্ভবতী নারীরা বায়ুদূষণের সবচেয়ে বেশি শিকার হচ্ছে। ইটভাটা, অবকাঠামো নির্মাণ ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে বের হওয়া ধোঁয়া ও ধুলার কারণে ওই দূষণ ঘটছে।
এর আগে গত মার্চে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এয়ারভিজ্যুয়ালের ‘বিশ্ব বাতাসের মান প্রতিবেদন ২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বিশ্বে সবচেয়ে বায়ুদূষণের কবলে থাকা শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা শহরের অবস্থান ১৭তম। আর রাজধানী শহরগুলোর তালিকায় ঢাকার অবস্থান দ্বিতীয়। এই শহরের বাতাসে ক্ষুদ্র বস্তুকণার (পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম ২.৫) পরিমাণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) বেঁধে দেওয়া মাত্রার চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বেশি।
