Pakundia Pratidin
ঢাকাশনিবার , ১৭ অক্টোবর ২০২০
  1. আন্তর্জাতিক
  2. ইতিহাস
  3. ইসলাম ও জীবন
  4. কৃতি সন্তান
  5. জাতীয়
  6. জেলার সংবাদ
  7. তাজা খবর
  8. পাকুন্দিয়ার সংবাদ
  9. ফিচার
  10. রাজনীতি
  11. সাহিত্য ও সংস্কৃতি
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ঘুরে আসুন ইতিহাসখ্যাত এগারসিন্ধুর গ্রাম

প্রতিবেদক
পাকুন্দিয়া প্রতিদিন ডেস্ক
অক্টোবর ১৭, ২০২০ ১:২১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

প্রাচীন স্থাপত্য শৈলীর অনন্য নিদর্শন, ইতিহাস ও ঐতিহ্যে ভরপুর কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার ঐতিহাসিক এগারসিন্দুর গ্রাম।

বার ভূঁইয়ার প্রধান বীর ঈশাখাঁর দূর্গ ছিল এখানে। ঈশাখাঁ ও মোঘল সেনাপতি মানসিংহের মধ্যে ইতিহাসখ্যাত যুদ্ধও হয়েছিল এখানে। বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় লাল মাটির এ অঞ্চলটি সবচেয়ে প্রাচীনতম। তার নিদর্শন এ স্থানের একাধিক প্রাচীন সমাধি ও মসজিদ। তেমনি দুটি প্রাচীন কীর্তির অনন্য নির্দশন হয়ে রয়েছে শাহ্ মাহমুদ মসজিদ ও সাদী মসজিদ।

এগারসিন্দুর দুর্গ

এগারসিন্দুরের ঐহিত্যগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে এগারসিন্দুর দুর্গ।

এগারসিন্দুর দুর্গ নির্মাতা নিয়ে রয়েছে মতভেদ। কেউ বলেন, রাজা আজাহাবা আবার কারো মতে বেবুদ রাজা এবং কারো মতে রাজা গৌর গৌবিন্দ। সুলতানী আমলের পরই এগারসিন্দুর এলাকাটি কোচ হাজংদের অধীনে চলে যায়। বাংলার বার ভূঁইয়ার প্রধান ঈশাখাঁ কোচ হাজং রাজাদের পরাজিত করে এগারসিন্দুর দুর্গটি দখল করেন। এ দুর্গ থেকেই পরবর্তীতে মোঘল সেনাপতি রাজা দুর্জন সিংহ ও পরে রাজা মানসিংহ কে পরাজিত করতে সমর্থ হন। তখন থেকেই এগারসিন্দুর দুর্গটি ঈশাখাঁর দুর্গ নামে খ্যাত।

শাহ্ মাহমুদ মসজিদ

এগারসিন্দুরের একটি প্রাচীন স্থাপত্য হচ্ছে শাহ্ মাহমুদ মসজিদ ও বালাখানা।

গবেষকদের মতে এটি ১৬০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে নির্মিত হয়। বর্গাকৃতির এ মসজিদটির প্রত্যেক বাহু ৩২ ফুট। চার কোণায় ৪টি বুরুজ রয়েছে। রয়েছে একটি বিশাল গম্বুজ। দু’পাশে দুটি সরু মিনার রয়েছে। ভিতরে পশ্চ িমের দেয়ালে ৩টি মেহরাব আছে।

শাহ্ মাহমুদ এ মসজিদ ও বালাখানা নির্মাণ করেছিলেন বলে এর নামকরণ হয় শাহ্ মাহমুদ মসজিদ।

সাদী মসজিদ

এছাড়াও এখানে সম্রাট শাহজাহানের রাজত্বকালে ১৬৪২ খ্রিষ্টাব্দে নির্মিত হয় সাদী মসজিদ।
পোড়ামাটির অলংকরণে সমৃদ্ধ এ মসজিদটি সম্পূর্ণ ইটের তৈরি। এটি এক গম্বুজ বিশিষ্ট বর্গাকৃতি মসজিদ। প্রত্যেক বাহুর দৈর্ঘ্য ২৭ ফুট। চারপাশে চারটি বুরুজ। পূর্ব দেয়ালে ৩টি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে ১টি করে প্রবেশ দ্বার রয়েছে। প্রবেশ পথগুলোর চারদিকে পোড়ামাটির চিত্র ফলকের কাজ রয়েছে। ভিতরে ৩টি অনিন্দ্য সুন্দর মেহরাব রয়েছে যা টেরাকোটার দ্বারা অলংকৃত।

১০৬২ হিজরির রবিউল আউয়াল মাসে শাহজাহান বাদশা গাজীর রাজত্বকালে শেখ নিরুর পুত্র সাদীর উদ্যোগে এ মসজিদটি নির্মিত হয় বিধায় এর নামকরণ হয় সাদী মসজিদ।

বেবুদ রাজার দীঘি

এগারসিন্দুরের প্রাচীন ঐতিহ্যের মধ্যে বেবুদ রা জার দীঘি অন্যতম। বেবুদ নামে হাজং রাজা বাস করতেন এখানে। একবার প্রচন্ড খরা দেখা দেয়ায় রাজা প্রজাদের কল্যাণে পঞ্চাশ একর জমি বিস্তৃত একটি দীঘি কাটলেন। কিন্তু পানির নাম গন্ধ নেই। এরই মধ্যে রাজা স্বপ্নে দেখেন তার রাণী যদি দীঘিতে নামে তবে পানি উঠবে।

স্বপ্নের কথা রাজা রাণীকে জানালে প্রজাদের মুখের পানে চেয়ে রাণী দীঘিতে নামতে রাজি হলেন তাতে রাজাও খুশি হলেন এবং পরদিন রাণী এক বাটি কাঁচা দুধ, পান সুপারি ও সিঁদুর নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দীঘিতে নামলেন। সাথে সাথেই দীঘির চারপাশ থেকে স্বচ্ছ জল এসে দীঘি ভরে গেল কিন্তু রাণী আর দীঘি থেকে উঠতে পারলেন না।

চোখের পলকে রাণীর কেশগুচ্ছ বৃত্তাকারে ঘুরতে ঘুরতে নিমজ্জিত হয়ে গেল। রাজা রাণীর জন্য পাগল প্রায় হয়ে গেলেন। দীঘিটি গভীর থাকায় পানি খুবই স্বচ্ছ দেখায়। বেবুদ রাজা দীঘিটি খনন করেন বিধায় তার নামানুসারে এ দীঘিটি বেবুদ রাজার দীঘি নামে পরিচিত।

এ দীঘির পানিতে গাছের পাতা কিংবা অন্য কোন কিছু পড়ে থাকলে তা পরদিন সকালে পাড়ে এসে জমা হয়। লোকমুখে শোনা যায়, কোন অনুষ্ঠানের জন্য দীঘির পাড়ে দাঁড়িয়ে থালা, বাসন ও অন্যান্য তৈজসপত্র চাইলে পরদিন দীঘির পাড়ে পাওয়া যেত। তবে শর্ত ছিল যা যা নেয়া হত তা সঠিকভাবে ফেরৎ দিতে হবে। কিন্তু একদিন কেহ এ শর্ত ভঙ্গ করায় এরপর থেকে তৈজসপত্র আর পাওয়া যায় না।

কিভাবে যাবেন

ঢাকার মহাখালী থেকে জলসিঁড়ি ও অনন্যা পরিবহনের বাস সরাসরি পাকুন্দিয়া চলাচল করে। থানারঘাট নেমে এগারসিন্দুর যাওয়া যায় সহজে।
অথবা পাকুন্দিয়া উপজেলা থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে এগারসিন্ধুর গ্রামে ঈশা খাঁর এই দূর্গের অবস্থান ।
পাকুন্দিয়ায় সরকারি ডাকবাংলো আছে চাইলে সেখানে থাকতে পারেন।